বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৩৩ অপরাহ্ন
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হলেও নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে রাজনীতিতে বিতর্ক বাড়ছে। এই ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতি এখন আলোচনার কেন্দ্রে। দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি পিআর পদ্ধতির কঠোর বিরোধিতা করছে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বেশকিছু রাজনৈতিক দল এই পদ্ধতির পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। ফলে পিআর পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর পক্ষে-বিপক্ষের বক্তব্য রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়াচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৫৫টি। এর মধ্যে বিভিন্ন কারণে চারটি দলের নিবন্ধন বাতিল রয়েছে এবং আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত রয়েছে। ফলে ৫০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে ১৮টি দল পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের পক্ষে। বিপক্ষে অবস্থান ২৮টি দলের। চারটি দল তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেনি। কিছু দল আংশিকভাবে এই পদ্ধতির পক্ষে। বিপক্ষে থাকা দলগুলো মূলত বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী। এর বাইরে জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি) পিআর পদ্ধতির পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছে। মূলধারার ইসলামী দলের মধ্যে পাঁচটি দল পিআর পদ্ধতির পক্ষে, দুটি বিপক্ষে এবং দুটি দল অবস্থান পরিষ্কার করেনি। পিআর পদ্ধতি নিয়ে কোন দলের কী অবস্থান: পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের পক্ষে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), তৃণমূল বিএনপি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি (বিএমজেপি) ও বাংলাদেশ কংগ্রেস।
<span;>অন্যদিকে, বিদ্যমান নির্বাচন ব্যবস্থার পক্ষে রয়েছে বিএনপি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, গণফোরাম, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ), বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি (নিম্নকক্ষ বিদ্যমান ব্যবস্থায় এবং উচ্চকক্ষ পিআর), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল), জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম (নিম্নকক্ষ বিদ্যমান ব্যবস্থায় এবং উচ্চকক্ষ পিআর), বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি), নাগরিক ঐক্য (নিম্নকক্ষ বিদ্যমান ব্যবস্থায় এবং উচ্চকক্ষ পিআর), গণসংহতি আন্দোলন (নিম্নকক্ষ বিদ্যমান ব্যবস্থায় এবং উচ্চকক্ষ পিআর)। সাকি বলেন, ‘পিআর পদ্ধতি এখন পর্যন্ত আলোচনার বিষয় নয়, কোনো কোনো দলের রাজনৈতিক দাবি। এখন উচ্চকক্ষে পিআরের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এর পক্ষে আমরা অবস্থান নিয়েছি।’
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘আমরা পিআর ব্যবস্থার পক্ষে। কিন্তু ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে যখন দলীয়ভাবে আমাদের সংলাপ হয়, তখন জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছানোর সুবিধার্থে আমরা একটু ছাড় দিতে সম্মত হই। উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতির ভিত্তিতে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা গেলে আমরা নিম্নকক্ষে প্রচলিত ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট বা এফপিটিপি পদ্ধতিতে ভোট হওয়ার ব্যাপারে সম্মত হই।’
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ‘আনুপাতিক হারে নির্বাচন হলে বাংলাদেশে ভবিষ্যতে কোনো স্বৈর সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে না। সব মিলিয়ে ভবিষ্যতে ফ্যাসিবাদী স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা ঠেকানোর জন্য এটি একটি কার্যকর মাধ্যম হতে পারে।
বিশ্লেষক মত: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান কালবেলাকে বলেন, বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ, আঞ্চলিক দল নেই এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা নয়। অথচ পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের জন্য এ তিনটি শর্ত লাগে। দেশে পিআর পদ্ধতির নির্বাচন হলে নতুনভাবে জটিলতা তৈরি হবে। এই মুহূর্তে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন করতে গেলে সরকার কাজই করতে পারবে না। সুতরাং এই ইস্যুতে আরও বিশদ আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। তিনি বলেন, পিআরের প্রকারভেদ রয়েছে। বিশ্বের ৭০টি দেশে পিআর পদ্ধতি চালু রয়েছে। তবে একেক দেশের পদ্ধতি একেক রকম।