বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১১:১৩ পূর্বাহ্ন
বগুড়া-৩ আসনে বিরল দৃষ্টান্ত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর প্রতি সৌহার্দ্য ও শ্রদ্ধাবোধ!
বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া) সংসদীয় আসন থেকে আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থীর মধ্যে যে সৌহার্দ্যপূর্ণ এবং গণতান্ত্রিক আচরণের প্রকাশ দেখা গেছে, তা বাংলাদেশের নির্বাচনী সংস্কৃতিতে এক বিরল ও প্রশংসনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে মনোনীত প্রার্থী আব্দুল মহিত তালুকদার এবং জামায়াতে ইসলামী থেকে মনোনীত প্রার্থী নূর মোহাম্মদ আবু তাহের—উভয়ের ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে প্রকাশিত পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা বিনিময় সাধারণ ভোটার থেকে শুরু করে রাজনৈতিক মহল পর্যন্ত সবাইকে মুগ্ধ করেছে।
নূর মোহাম্মদ আবু তাহেরের শুভেচ্ছা বার্তা: শ্রদ্ধার্ঘ্য ও গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা তরুণ রাজনীতিবিদ নূর মোহাম্মদ আবু তাহের তার পোস্টে আব্দুল মহিত তালুকদারকে সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হওয়ায় প্রথমে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। তিনি মহিত তালুকদারকে শুধু একজন সিনিয়র রাজনীতিবিদ হিসেবে শ্রদ্ধা জানাননি, বরং তার পারিবারিক রাজনৈতিক ঐতিহ্যের কথাও তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন: মহিত তালুকদার একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান, যার পিতা তিন বারের এবং বড়ো ভাই দুই বারের সংসদ সদস্য ছিলেন। মহিত তালুকদার নিজে ইউপি চেয়ারম্যান এবং উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তালুকদার পরিবার এলাকার উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে দীর্ঘদিন নেতৃত্ব দিয়েছে। তিনি ব্যক্তিগতভাবে মহিত তালুকদারকে সজ্জন ও ভদ্র মানুষ হিসেবে অভিহিত করেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, তাহের তার প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনার একটি অংশ হিসেবে দেখেন। তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন, এই নির্বাচনী লড়াই “জম্পেশ” হবে এবং এই আসনটি দেশের বুকে উদার, সহনশীল ও গণতান্ত্রিক হিসেবে পরিচিতি পাবে। তার এই বার্তা প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রতি সম্মান এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি দৃঢ় আস্থার প্রকাশ।
আব্দুল মহিত তালুকদারের উত্তর: তারুণ্যের প্রতি আস্থা ও পরিচ্ছন্ন নির্বাচনের অঙ্গীকার, আব্দুল মহিত তালুকদার, একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ হিসেবে, অত্যন্ত বিচক্ষণতা এবং আন্তরিকতার সাথে নূর মোহাম্মদ আবু তাহেরের বার্তার উত্তর দেন। তিনি তাহেরের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রকাশের মানসিকতার প্রশংসা করেন এবং বলেন, এটি “আমাদের এলাকার রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তিনিও তাহেরকে জামায়াতে ইসলামীর মনোনয়ন পাওয়ায় অভিনন্দন জানান এবং তার তারুণ্য, শক্তি এবং এলাকার মানুষের সেবা করার আগ্রহের প্রশংসা করেন। মহিত তালুকদার বিশ্বাস করেন নতুন প্রজন্মের সক্রিয় অংশগ্রহণ গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করবে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভিন্ন মত ও পথের সহাবস্থান থাকবে। তিনি আশা করেন, তাদের প্রচারাভিযান হবে পরিচ্ছন্ন, মর্যাদাপূর্ণ এবং জনকল্যাণমুখী, যা এলাকার মানুষের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। সবশেষে, তিনি আহ্বান জানান যেন আসন্ন নির্বাচনী লড়াই নীতির, আদর্শের এবং উন্নয়নের প্রতিযোগিতা হয়—দ্বন্দ্ব নয়। তিনি একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মধ্যে প্রকাশ্যে ঘটে যাওয়া সৌহার্দ্য বিনিময় বগুড়া-৩ আসনের সাধারণ ভোটার এবং সারাদেশের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মধ্যে গভীর ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা: তাদের এই আচরণ প্রমাণ করে যে, তীব্র রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা সত্ত্বেও ব্যক্তিগত শ্রদ্ধা, শিষ্টাচার এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বজায় রাখা সম্ভব।
ইতিবাচক বার্তা: এটি নতুন প্রজন্মের রাজনীতিবিদদের এবং সাধারণ জনগণকে একটি বার্তা দেয় যে, রাজনীতি মানেই শুধু বিদ্বেষ ও কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি নয়, বরং ভিন্ন মতের প্রতি সহনশীলতা বজায় রেখে জনগণের কল্যাণে কাজ করার এক মাধ্যম। প্রশংসনীয় দৃষ্টান্ত: আব্দুল মহিত তালুকদার ও নূর মোহাম্মদ আবু তাহেরের এই আচরণ দেশের নির্বাচনী সংস্কৃতিতে এক উচ্চ মানদণ্ড স্থাপন করেছে এবং ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। এই নির্বাচনী লড়াই, প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাপিয়ে সৌহার্দ্য ও শ্রদ্ধার প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠুক—এই প্রত্যাশা এখন বগুড়া-৩ আসনের মানুষের।